রবীন্দ্র জীবন ও সাহিত্যের সঙ্গে মিশে আছে শিলাইদহ। এটি কুষ্টিয়া জেলা শহর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে অবস্থিত একটি পর্যটন গ্রাম-এলাকা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর যৌবনকালের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছেন এখানে। এখানে বসেই তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, গীতাঞ্জলি রচনা করেন।
১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন।
১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্হাপনায় শিলাইদহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়িটি গৌরবময় স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কুঠিবাড়িটি গুরুত্ব অনুধাবন করে কবির বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক একে একটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ।
পুরো ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্যে উম্মুক্ত । জাদুঘরের নীচ ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ১৬টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি।
কবিগুরু ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতই আলোকিত এক নাম। শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকে ধারণ করে কুষ্টিয়া তথা দেশবাসী আজ গৌরবান্বিত।
কুঠিবাড়ির ছাদ জাপান থেকে উন্নতমানের টালি এনে তৈরি করা হয়েছিল। তিন তলা কুঠি বাড়িতে উঠার জন্যে বাইরের দিকে আরো একটি বিশেষ কায়দায় গোল করে প্যাঁচানো লোহার একটি সিড়ি রয়েছে।
কুঠিবাড়ির চারিদিকে রয়েছে শুধু গাছ আর গাছ। আর কুঠি বাড়ি ভবনের পশ্চিমে রয়েছে বড় একটি পুকুর। এই পুকুরটি শান বাঁধানো। পাকা পুকুর পাড়ে বকুল ফুলের গাছ তলায় খানিকটা বসলে পদ্মার শীতল বাতাসে নিমেষেই জুড়িয়ে যাবে মন-প্রাণ ও শরীর৷
২৫ বৈশাখ কবি গুরুর জন্ম দিন। প্রতি বছর এই দিনটি এলেই বদলে যায় কুঠিবাড়ির দৃশ্য। কুঠিবাড়িকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে উৎসব, বসে বিরাট গ্রামীণ মেলা। নামে মানুষের ঢল। আগমন ঘটে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য কবি,সাহিত্যিক ও গুণীজনসহ হাজারো দর্শনার্থীর।
জাদুঘরের গেটের পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার। জনপ্রতি টিকেট বিশ টাকা করে। তবে পাঁচ বছর বয়সের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর প্রয়োজন পড়েনা।
পদ্মার ঢেউ খেলানো প্রাচীরঘেরা ৩৩ বিঘা জমির ওপর তিনতলা এই কুঠিবাড়িটি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শিলাইদহের বুকে। তবে মূল বাড়িটি রয়েছে আড়াই বিঘার উপর।
এই ঘরের জানালা দিয়ে এখন শুধু পদ্মাকে দেখা যায়। কবি রবীন্দ্রনাথ তখন ঘরে বসেই শুনতে পেতেন নদীর ডাক। নদী যেন কলকল ছলছল করে ডাকতো কবিকে।