ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। সে ঈদ-উল-ফিতর হোক অথবা ঈদুল আযহা। প্রত্যেক মুসলমানের মনে আনন্দের নতুন ফল্গু ধারা বয়ে আনে ঈদ। সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে ঈদের আনন্দের ধরন।
খুব ছোটবেলায় বাবার সাথে মার্কেটে গিয়ে নতুন জামা কাপড় কেনার একটা আনন্দ ছিল। পরিবর্তন হয়েছে সব কিছুতেই। এখন আর বাবারা শপিংয়ে যায় না। মা ভাবি বোন রা এখন শপিংয়ে নিজেদের সময় দেয়। পরিবারের সবার জন্য নতুন জামা কাপড় কেনা হয়।
ঈদুল আযহায় অবশ্য জামাকাপড় কেন খুব কম হয়। সবার ঈদের আনন্দ মূলত বাড়ির পালিত পশুকে ঘিরে। তিনবেলা খাওয়ানো, গোসল করানো, যত্ন করা এর মাঝেই আনন্দ খুঁজে পায় বাড়ির গৃহস্থ এবং ছেলে মেয়েরা। এই আনন্দ আস্তে আস্তে ফিকে হতে থাকে যখন ঈদের দিন ঘনিয়ে আসে। প্রিয় পশুকে কোরবানি দিতে হবে এটা ভাবতেই যেন তাদের মন কষ্টে ভরে যায়। যে প্রাণীকে দীর্ঘদিন হাতে খাওয়ানো, গোসল করানো হয়েছে ঈদের দিন থেকে সে আর গোয়ালে ফিরবে না। এটা ভাবতেই বাড়ির সবার মন খারাপ হয়।তবুও সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে সওয়াবের আশায় প্রতি বছর নিয়মিত পশু কুরবানী দেওয়া হয়। আল্লাহ পাকের এটাই বিধান।
কিন্তু এবছরের প্রেক্ষিত ভিন্ন। ঈদের আনন্দ অনেকটাই আতঙ্কের আনন্দ রূপান্তরিত হয়েছে। কোভিড- 19 ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে, সারা বিশ্বে। মানুষ আতঙ্কের মধ্যেই এবার ঈদ করতে হচ্ছে। গত ঈদুল ফিতরের সবাই যে যার কর্মস্থল অথবা বাসাবাড়িতে আবদ্ধ থাকলেও এই ঈদের প্রেক্ষিত ভিন্ন। যে যেখানে ছিল সবাই গ্রামে ফিরে আসছে. মায়ের কাছে, নাড়ির টানে।
প্রিয় গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন যেন বাঙালির চিরাচরিত নিয়ম। সকালে গোসল করে সুন্নতি পোশাক পড়ে গ্রামবাসীর সাথে ঈদের নামাজ আদায় করা এরপর কোলাকুলি করার মধ্যে যে অপরিসীম আনন্দ থাকে সেটা কেউ মিস করতে চাইবে না। নামাজ শেষে যে যার বাড়িতে কোরবানির পশু রেডি করা এরপর মহান আল্লাহপাকের উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করার মাধ্যমে সারাদিন কেটে যায় ব্যস্ততায়। বিকেল হতেই মাংস বিলিবন্টন হয়ে যায়। প্রত্যেকের বাড়িতে ধোঁয়া ওঠা গরম মাংসের সাথে সাদা ভাত অথবা চালের রুটি যেন অন্যরকম আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে ঘরে ঘরে। এই দিনে কেউই অভুক্ত থাকে না। সবাই যে যার স্থান থেকে দাওয়াত দেয়।
ঈদের আনন্দ সবচেয়ে আন্দোলিত করে কিশোর-কিশোরীদের। তাদের না থাকে কোন দায়িত্ব না থাকে কাজ। সকাল থেকেই তারা সেজেগুজে নামাজ-কালাম আদায় করে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যায়,ফিরনি সেমাই খায়, আড্ডা হয়, ছবি তোলা হয়। সমস্ত ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে সবার সাথে নিজের সুখের দিন টি শেয়ার করে।
কিন্তু এবারে প্রেক্ষিত ভিন্ন। শহর থেকে গ্রামে এসেছে মানুষ। সবাই কিছুটা চিন্তিত আছে। যে যার মত সাবধানতা অবলম্বন করে চলছে। তার চেয়ে বড় দুঃখ গ্রামের শ্রমজীবী চাষী যারা কৃষি কাজের পাশাপাশি গরু-ছাগল পালন করত তাদের পুঁজি হারিয়ে কষ্টে আছেন। এবারের ঈদ নতুন ভাবে এসেছে। যা আগে কখনও এরকম হয় নি। । সবার প্রতি সবার আকুলতা আনন্দ ভালবাসা থাকলেও কেউ কারো সাথে মিশতে পারছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কুশলাদি বিনিময় হচ্ছে। সবাই সবার সাথে আন্তরিকতা বজায় রাখতে পারছে না। এ যেন এক অন্যরকম প্রেক্ষাপট, অন্যরকম পরিস্থিতি।
ঈদুল আজহার অন্যতম ধর্মীয় রীতিনীতির মধ্যে হজ হল অন্যতম প্রধান রীতিনীতি। সারাবিশ্বে করোনা মহামারির কারণে এবার হজ আংশিকভাবে পালন হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে ধার্মিক মানুষের স্বপ্ন দেখেছিল এবার হজে যাবে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা যিয়ারত করবে, পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করবে,কুরবানী দেবে কিন্তু এই মহামারী কারণে মুসলমানদের মনে কিছু অপূর্ণতা নিয়ে ঈদ করতে হচ্ছে।হজ্ব হচ্ছে সীমিত পরিসরে। নিষিদ্ধ হয়েছে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্য মিলনমেলার স্থান মক্কায় জমায়েত হওয়া। অনেকেই সামর্থ্য হীনতার কারণে কুরবানী দিতে পারছে না। তাই বলা চলে এবারের ঈদুল আযহা একটা ভিন্ন পরিবেশে এসেছে আমাদের মাঝে।
ঈদ মানেই তো আনন্দ অতএব আমরা সবাই যে যার অবস্থান থেকে যদি আমাদের আনন্দ আমাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারি তাহলে হয়তো সবার মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী বন্ধু-বান্ধব সবার সঙ্গে কোরবানির মাংস শেয়ার করলে সবার মনে কিছুটা হলেও আনন্দ আসবে। তবে সর্বশেষ বলবো মুসলমানদের জন্য এবারের ঈদ একটা স্মরণীয় কারণ এই জন্য যে সমস্ত ধার্মিক নিয়ত করেছিলেন এবার হজে যাবেন, কোরবানি দিবেন তাদের স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে গেল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন সামনের বছরে তাদের মনের আশা পূরণ করার বাঁচিয়ে রাখেন।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক।