সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গোৎসব । আর বিশ্ববাসীর সব সময় আতংক করোনা । তাই সারা বিশ্বে বসবাসরত সব মানুষ যেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারি থেকে মুক্তি পায় সেই উদ্দেশ্যে দেশের সব পূজামণ্ডপে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৩’অক্টোবর) শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর দিন দুপুর ১২টা এক মিনিটে দেশের ৩০ হাজার ২১৩টি পূজামণ্ডপ থেকে একযোগে এ প্রার্থনা করা হয়। প্রার্থনায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশের মানুষের করোনা মুক্তির প্রত্যাশায় আরাধনা করা হয়। একই সঙ্গে দেশের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
পঞ্জিকার তিথি অনুযায়ী, শুক্রবার দেবী বন্ধনার মহাসপ্তামী। ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী দেবী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও সপ্তমী তিথিতে দেবীকে স্নান করিয়ে বিহিত পূজার পর পুষ্পাঞ্জলীর মাধ্যমে দেবীর চরণে পুষ্পার্ঘ অর্পন করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সকাল থেকে চণ্ডিপাঠে মুখরিত ছিল বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ এলাকা। বেলা ১২টা ১৪ মিনিটের মধ্যে দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সনাতন শাস্ত্রানুসারে মা দুর্গা হচ্ছেন আধ্য শক্তি দেবী ভগবতি। তার বহুরূপ। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা বলে তিনি পার্বতী। আবার দুর্গম নামক অসুরকে বধ করে ছিলেন বলে তার অন্য নাম দুর্গা। আবার তিনিই চন্ডী, মহিষাসুরমর্দিনী।
পূজা শেষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভক্তি শ্রদ্ধার সাথে ভক্তবৃন্দ মা রূপের দেবী দুর্গার নিকট নিজের, পরিবারের ও দেশ-জাতির মঙ্গল প্রার্থনা করে চন্ডী শ্লোক পাঠ করে দেবীর চরণে ফুল-বেলপাতায় পূষ্পাঞ্জলী অর্পন করেন।
এর আগে বুধবার (২১’অক্টোবর) বোধনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার ঢাকে পড়ে কাঠি। দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনাপূজার মধ্য দিয়ে দেবীর বোধন হয়। বুধবার পঞ্চমী তিথিতে সায়ংকালে অর্থাৎ সন্ধ্যায় এই বন্দনাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছিল দেবীপক্ষের। প্রতি বছর দেবীপক্ষের শুরুর সপ্তাহবাদে দুর্গাপূজা শুরু হলেও ‘মল মাস’ বা ‘অশুভ মাসের’ কারণে এবার দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে মহালয়ার ৩৫ দিন পার করে।
এবারে দশভূজা দুর্গার আগমন হচ্ছে দোলায়। দোলায় চড়ে বাপের বাড়ির উদ্দেশে স্বামীর ঘর থেকে রওনা দেবেন তিনি। ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের মতে, দোলায় আগমন এর অর্থ মড়ক। ফলে পূজার বা তার পরবর্তী সময়েও মহামারির পরিস্থিতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মায়ের গমন এবার গজে। অর্থাৎ হাতিতে চড়ে মা বাপের ঘর ছেড়ে পাড়ি দেবেন স্বর্গে। গজে(হাতি) চড়ে গমনের ফল শুভ হয়।
তবে এই বছরের পূজা অন্যান্য বছরের মতো নয়। করোনা আতঙ্কের আবহেই এবার দেবীপক্ষের সূচনা হয়। আর মহামারির দুর্যোগ মাথায় নিয়েই এবার হচ্ছে মাতৃবন্দনা।
জানা গেছে ,এবার সারাদেশে ৩০ হাজার ২২৫টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুর্গাপূজা। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৩৯৮টি। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা ২৩৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ২৩৭টি। ঢাকা বিভাগে সাত হাজার ১৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাত হাজার ২৭১টি মন্দিরে। গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রাম বিভাগে এবার ৫৫০টি কম মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এ বিভাগে এবার পূজা অনুষ্ঠিত হবে তিন হাজার ৯০৬টি।
এর মধ্যে খুলনা বিভাগে চার হাজার ৬৮৯টি, সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৬৪৬টি, ময়মনসিংহ বিভাগে এক হাজার ৫৮৪টি, বরিশাল বিভাগে এক হাজার ৭০১টি, রংপুর বিভাগে পাঁচ হাজার ২৫০টি এবং রাজশাহী বিভাগে তিন হাজার ৪৩৫টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এবার করোনাভাইরাসের কারণে পূজার অনুষ্ঠানমালা শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির বা মণ্ডপ প্রাঙ্গণে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। মণ্ডপ ও ভক্ত পুজারিদের নিরাপত্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।