এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ আসেন যাদের ধ্যান ধারনায় বিরাজ করে মানব কল্যান।সকলকে শিক্ষার আলো দান,সামাজিক, ধর্মীয় সহ সার্বিক উন্নয়ন থাকে তাদের মূল লক্ষ্য।কখনো স্বীয় বিত্ত বৈভব বৃদ্ধির অভিলাষ স্হান পায় না তাদের হৃদয়ে। তেমনি একজন ক্ষনজন্মা ব্যক্তি কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার খোকসা গড়াই নদীর তীরে জলের স্বচ্ছতা নিয়ে ছোট থেকে বড় হয়ে উঠেছিলেন তিনি সর্বজন শ্রদ্ধার পাত্র স্বর্গীয় দীনেশ চন্দ্র নন্দী মহাশয়,তার পিতা ছিলেন স্বর্গীয় পূর্ণ চন্দ্র নন্দী। প্রয়াত দীনেশ চন্দ্র নন্দী ১৮৯৮ থেকে ১৮৯৯সালের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে জন্ম গ্রহন করেন।
তিনি অতিশয় সদালাপী ও মানবিক গুণাবলী নিয়ে বড় হতে থাকন।তাঁর কোনরূপ অর্থাভাব কিম্বা প্রাচুর্যের অভাব ছিলোনা তাই মানুষের কল্যানে অবলীলায় প্রয়োজন জনহিত কাজে ব্যয় করতেন।
তৎকালীন সময়ে মানুষের চিকিৎসার কোন ব্যবস্হা ছিলো না।জেলা শহরের হাসপাতালে নেয়া ছিলো কল্পনাতীত, বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে তাই তিনি খোকসাতে দাতব্য চিকিৎসা ব্যবস্হা গড়ে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা নেন এবং দাতব্য চিকিৎসালয় স্হাপনের চাহিদা মোতাবেক জমি দান করেন,সেখানে জেলা পরিষদ একটি চিকিৎসা কেন্দ্র তৎসহ ডাক্তার, একজন কমপাউন্ডার ও একজন পিয়ন নিয়োগ প্রদান করেন।দীর্ঘদিন এই ব্যবস্হাতে এ অঞ্চলের জনসাধারণ অভ্যস্হ হয়ে উঠে। পরবর্তী সময়ে খোকসা উপজেলা স্বাস্হ্য কেন্দ্র গড়ে উঠা পর্যন্ত খোকসা দাতব্য চিকিৎসালয়ে থেকে তৎকালীন টি,এইচ,এ গন তাদের কার্য্য পরিচালনা করতেন। বর্তমানে দাতব্য চিকিৎসালয় ভবনের অংশ বিশেষ খোকসা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পাশে,উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরী হিসেবে বিবেচিত রয়েছে। খোকসায় পশু হাসপাতালের জন্য নন্দী বাবু প্রয়োজনীয় জমির অর্ধেক জমি তিনি দেন।
সাধারণ মানুষের প্রতি তার ছিলো অসীম মমতা,যখন প্রয়াত মনসুর আলী বিশ্বাস খোকসা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন সে সময় পরিষদের কোন স্হায়ী জায়গা ছিলোনা। শুরু হলো জায়গা খোঁজার কাজ,অনেকটা জমি প্রয়োজন। অবশেষে নন্দী বাবুর শরণাপন্ন হলেন এবং জমির প্রাপ্তির জন্য অনুরোধ করেন।অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারেন নাই,হলো ইউনিয়ন পরিষদ নন্দী বাবুর দান করা জমিতে,আজ সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে সুরম্য পৌরসভা ভবন বললেন নন্দী মহাশয়ের মেঝো ছেলে অমল কুমার নন্দী মহাশয়।
খোকসা বাজারের দক্ষিণ অংশের রাস্তা নদীতে ভেঙে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াতের জন্য নিজ জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরী করতে সহযোগিতা করে এক মহানুভবতার উদাহরণ সৃষ্টি করেন।এলাকার নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি এবংআর একজন বিত্তবান জোতদার দাতা প্রয়াত নৃপতি সিংহ বাবু এক সংগে বালিকা বিদ্যালয় শুরু করেন মরহুম আব্দুর রহমান বিশ্বাসের বাড়ীতে এরপর শুরু করেন খোকসা হাইস্কুলে এবং শেষমেশ মহিম সাহার বাড়িতে (বর্তমানবাজার সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা অফিসের পশ্চিমে। পরবর্তিতে জানিপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রয়াত চেয়ারম্যান আকামদ্দিন সাহেব এই বালিকা বিদ্যালয়টি খোকসা,জানিপুর ও কমলাপুরের মাঝে খোকসা জানিপুর বালিকা বিদ্যালয় নামে প্রতিষ্ঠিত করেন।তারা সঠিক ভাবে শুরু করেছিলেন বলে আজকে আমরা পূর্ণতায় লক্ষ্য করছি। খোকসা কলেজের জন্য জমি দান করে আমাদের চিরকৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন প্রয়াত দীনেশ নন্দীর যোগ্যা সহধর্মীনি স্বর্গীয় নিরুপমা নন্দী মহাশয়া। খোকসা জানিপুর হাইস্কুলে যে মূল তিনজন জমি দাতা তারমধ্যে প্রয়াত দীনেশ চন্দ্র নন্দী, প্রয়াত নৃপতি সিংহ এবং একতারপুরের প্রয়াত উমাপদ বিশ্বাস তাদের আনুকুল্যে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে বিশাল প্রতিষ্ঠানটি।হাজার হাজার ছাত্র লেখা পড়া শেষ করে চলে তারা কি জানে কাদের রক্ত বিন্দু দিয়ে গড়া এ প্রতিষ্ঠান…?
খোকসা কেন্দ্রীয় পূজা মন্ডপ (নিমতলা) প্রতিষ্ঠা করেন স্বর্গীয় রুদ্রনাথ পাল ও স্বর্গীয় দীনেশচন্দ্র নন্দী মহাশয় দ্বয়ের প্রচেষ্টায়।তাঁরা দুই জনের দানের জমিতে তৈরী হয়েছে এই সুন্দর মন্দিরটি।সব সময় চলতে থাকে ধার্য্য মোতাবেক পূজা পার্বনের কার্যক্রম।
খোকসা পৌরসভার এলাকাভুক্ত পাতিলডাঙ্গি গ্রামে ধর্মীয় উদ্দেশ্য হরিঠাকুরের নামে দুই বিঘা জমি দান করেন বাবু দীনেশচন্দ্র নন্দী মহাশয়।এছাড়াও অনেক শিক্ষা, সামাজিক ওধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রসন্ন চিত্তে সাহায্যের দুহাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রয়াত নন্দী বাবু মহাশয় তিনটি পুত্র ও দুই কন্যার জনক ছিলেন। বড় ছেলে বিমল নন্দী বর্তমানে ভারতে স্হায়ীভাবে বসবাস করেন।মঝো ছেলে অমল নন্দী ও ছোটছেলে নির্মল নন্দী মহাশয় দ্বয় খোকসাতে স্হায়ী ভাবে বাস করেন।বড় মেয়ে অনিমা রানী বিশ্বাস থাকতেন কলিকাতাতে,তিনি সবাইকে ছেড়ে গেছেন এ ধরাধাম থেকে। ছোট মেয়ে মায়া রানী গুন।আমার বড় বোনের সহপাঠী অনেক দিন এসেছেন আমাদের বাড়ি। মায়া দিদির বাসা ছিলো নারায়ন গন্জ।একবার মনি পালের সাথে গিয়েছিলাম তার বাসায়। ভীষণ সাজানো সংসার,আপ্যায়ন করেছিলেন মায়া দিদি, কি ভালো মানুষ ছিলেন তিনি ভাবলে চোখে পানি এসে যায়।ভালো মানুষ থাকে না, তাইতো তিনি ও আমাদের সবাইকে ছেড়ে,নিজ আত্মীয় স্বজন ছেড়ে পাড়ি দিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। খোকসার তৎকালীন সমাজ তথা মানুষের কল্যানকামী ক্ষনজন্মা দাতার জীবনের অবসান ঘটে গত ২৩-১০-৮৪ সালে ৮৫বছরবয়সে। আমরা খোকসা বাসী তাকে কোনদিন ভুলবো না। চিরদিন হৃদয়ের অন্তস্হলেথাকবে আসন চির অম্লান।
ঈশ্বর তাকে তার আত্মার শান্তি দিন।
ছবিতে পরিবারের ভালোবাসার মানুষের সাথে লেখক
এস এম নাজিম রেজা
লেখক ও সাংস্কৃতি ব্যাক্তিত্ব
[বিঃদ্রঃস্পষ্ট ছবি সংগ্রহ সম্ভব হয়নি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন লেখক]